স্বদেশ ডেস্ক:
চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর কাঁটাবন ঢাল মসজিদে ও বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে জানাজা শেষে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করা হয় তাকে।
রাজধানীর কাঁটাবন এলাকায় এমাজউদ্দীন আহমদের বাসার কাছে কাঁটাবন ঢালের মসজিদে প্রথম জানাজায় অংশ নেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ এলাকার মুসল্লিরা অংশ নেন। বিকালে ৫টা বাজার কয়েক মিনিট আগে দ্বিতীয় জানাজার জন্য নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত জানাজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মো. আখতারুজ্জামান, শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌস হোসেন ও সাবেক সভাপতি নুরুল আলম বেপারী, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক ড. এ.বি.এম. ওবায়দুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. মোর্শেদ হাসান খান, সদস্য ড. সিদ্দিকুর রহমান খান, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, অধ্যাপক ইসরাফিল প্রামানিক রতন অংশ নেন।
এতে আরও অংশ নেন বিএনপি নেতা ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক ডাকসু জিএস খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সহ সভাপতি আশরাফুল আলম লিংকন প্রমুখ।
জানাজার পর এমাজউদ্দীনের মরদেহে ঢাবি উপাচার্য, শিক্ষক সমিতি, ডাকসুর সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সমিতি, যুবদল, ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানায়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমাজউদ্দীনের মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স মিরপুর বুদ্ধিজীবী গোরস্থানের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখানে স্ত্রীর কবরের পাশে শায়িত হন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন।
এর আগে অশ্রুসজল নয়নে প্রয়াত বাবাকে বিদায় জানান প্রিয় দুই মেয়ে অধ্যাপক দিলরুবা শওকতা আরা ইয়াসমিন ও অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন এবং ছেলের জিয়া হাসান ইবনে আহমদ, পালিত পুত্র অমর চন্দ্র মিস্ত্রী। দাফন শেষে প্রয়াত এমাজউদ্দীনের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়। দাফন কাজে আরও অংশ নেন জাতীয় ফুলবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও গোলরক্ষক আমিনুল হক, বিএনপি নেতা, সাবেক কমিশনার মাসুদ খান প্রমুখ।
এর আগে আজ শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে এমাজউদ্দীন আহমদের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ২টায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) হয় তার। পরে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের জন্ম ১৯৩৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর অবিভক্ত বাংলার মালদহে। ভারত ভাগের পর তার পরিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলে আসে। এমাজউদ্দীন আহমদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ‘গোহাল বাড়ি’ এলাকায় পরিবারসহ দীর্ঘদিন বসবাস করেন। শিবগঞ্জের আদিনা সরকারি ফজলুল হক কলেজ ও রাজশাহী কলেজে পড়ালেখা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এমাজউদ্দীন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের নির্বাচিত ভিপিও ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। স্নাতকোত্তর শেষ করে রাজশাহী কলেজে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে এমাজউদ্দীনের পেশাজীবনের শুরু। পরে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে এসে ১৯৭০ সলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন এমাজউদ্দীন। তিনি পিইচএইডি লাভ করেন কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
দীর্ঘদিন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা এমাজউদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রোভিসির দায়িত্বও পালন করেছেন। ১৯৯২ সালে তাকে দেওয়া হয় উপাচার্যের দায়িত্ব। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন।
১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরের পর ইউনির্ভাসিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভে (ইউডা) যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে শিক্ষা ক্ষেত্রের অবদানের জন্য একুশে পদক পান এমাজউদ্দীন আহমদ।
বিএনপিতে কোনো পদে না থাকলেও দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একজন পরামর্শদাতা ছিলেন তিন। কবি আবদুল হাই শিকদারের সঙ্গে মিলে তিনি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে একটি বইও লিখেছেন। শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বেও ছিলেন এমাজউদ্দীন।
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য এমাজউদ্দীন আহমদ ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা’, ‘মধ্যযুগের রাষ্ট্র চিন্তা’, ‘তুলনামূলক রাজনীতি: রাজনৈতিক বিশ্লেষণ’, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র সংকট’, ‘সমাজ ও রাজনীতি’, ‘গণতন্ত্রের ভবিষ্যত’, ‘আঞ্চলিক সহযোগিতা ও জাতীয় নিরাপত্তা’সহ অর্ধশতাধিক বই লিখেছেন।
তার স্ত্রী সেলিমা আহমদ ২০১৬ সালেই মারা গেছেন। অধ্যাপক দিলরুবা শওকতা আরা ইয়াসমিন ও অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন তাদের দুই মেয়ে। দুই ছেলের মধ্যে জিয়া হাসান ইবনে আহমদ সরকারি কর্মকর্তা, তানভীর ইকবাল ইবনে আহমদ একজন চিকিৎসক।